ড. মো : রাশিদুর রহমান খান
বাংলাদেশের সিরাজগন্জ জেলা, উল্লাপাড়া উপজেলা, লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়ন, পশ্চিম বামন গ্রামে শিক্ষানুরাগী সম্ভ্রান্ত খান পরিবারে ১৯৬৪ সালের ৩রা জুলাই মো: রাশিদুর রহমান খান এর জন্ম। পিতা মো: আব্দুল হামিদ খান ছিলেন একজন বিচক্ষণ কৃষক, মা রহিমা খাতুন গৃহিণী, শিক্ষানুরাগী বড় চাচা মো: আছহাব উদ্দিন খান ছিলেন সৎ কর্মনিষ্ঠা পরায়ণ পথ প্রদর্শক এবং শশুর ডা: মো: আজিজুল ইসলাম (এমবিবিএস) ছিলেন একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। সংসার জীবনে তিনি দুই কন্যার জনক। সহধর্মিনী ড. দিলরুবা আফরোজা ইসলাম রসায়ন বিষয়ে পিএইচডি, বড় মেয়ে মুহাইমিন মারিয়াম খান কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র পিএইচডি-তে এবং ছোট মেয়ে রাদিয়া মারিয়াম খান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, বস্টন, যুক্তরাষ্ট্র এমএস-এ অধ্যায়নরত।ছোটবেলা থেকেই তিনি দূরন্ত প্রকৃতির এবং খেলাধুলা ও বন্ধু বৎসল। স্কুল জীবনে সুশৃঙ্খল স্কুল তার মোটেই ভাল লাগত না, স্কুলে অযথা সময় নষ্ট না করে সেই সময় বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলাধুলা করা, গরু চরানো, পুকুরে মাছ ধরা এবং বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসাকেই প্রাধান্য দিতেন। আপত্তি থাকা সত্বেও পারিবারিক চাপে পরীক্ষা দিয়ে ১৯৭৪ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ১২৬ বছর বয়সী স্কুলে প্রথম ছাত্র হিসেবে তিনি মেধাবৃত্তি অর্জন করেন। মেধাবী এই ছাত্র স্কুল-কলেজ পাশ করে ১৯৮৪-৮৫ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮৮ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৯২) এই বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স এবং একই বিভাগ থেকে ১৯৮৯ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৯৩) প্রথম শ্রেণিতে থিসিস সহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। মাস্টার্স পাস করে চাকুরির প্রথম পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হয়ে শিল্পমন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পরেশন বিসিআইসিতে সহকারী রসায়নবিদ হিসেবে যোগদান করেন। চাকুরি কালীন সময়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তার মেধা দিয়ে ১৯৯৬ সালে বিআইএসএফলি:-এ স্যানিটারি প্যান, বেসিন এবং কমোডের গুণমানের উন্নয়ন ঘটান, ফলস্বরুপ ১৯৯৭ সালে কর্পরেশন থেকে মেধা অ্যাওয়ার্ড -এর পাশাপাশি জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে জাপান গমন করেন। জাপানে থাকা কালীন তিনি লক্ষ্য করেন জাপানিজদের দীর্ঘায়ুর একটি অন্যতম কারন তারা সর্বদাই ভাল পানি (ক্যানজেন ওয়াটার অর্থাৎ অ্যালকালাইন ওয়াটার) পান করে। তাই ১৯৯৮ সালে দেশে ফিরেই তিনি তার সহধর্মীনির সহযোগিতায় খাবার পানির গুণমান উন্নয়নে নিজ বাসায় একটি ছোট গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় ৪ বছরের গরেষণায় আশাতিত ফল পাওয়ায় ২০০৩ সালে বিসিআইসির চাকুরি থেকে ইস্তফা দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শফিউল্লাহর তত্বাবধানে পানির গুণমান উন্নয়ন বিষয়ে ফেলোসিপ নিয়ে পিএইচডিতে ভর্তি হন। ২০১০ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করার পাশাপাশি তিনি খাবার পানি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পানির গুণমান উন্নয়নে দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। ২০১৩ সালে তিনি তার সহধর্মিনী ড. দিলরুবা আফরোজা ইসলাম ও ডা: মো: আতিকুল ইসলামের সহযোগিতায় শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পানি পরিশোধনের জন্য DARK ETP LTD কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০১৩ সাল থেকেই অদ্যাবধি পরিবেশ অধিদপ্তরের মান ও নিয়মানুযায়ী দেশে প্রথম ১০০% রিসাইক্লিং ETP, STP স্থাপন করে গার্মেন্টস, ডাইং, পেপার, ফুড, হাসপাতাল ও ফার্মাসিটিউক্যাল সেক্টর যেমন- গ্লোব, ওরিয়ন, হামদর্দ, পার্টেক্স, সিনহা, রক্সি, বর্ণালী, কাশেম, বাংলাক্যাট, আরপেক, এএ্যান্ডএ, এলিট, মাগুরা গ্রুপ সহ বহু প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পানি পরিশোধনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন। ড. খান তার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০১৭ সালে খাবার পানির যুগান্তকারী একটি ফর্মূলা আবিষ্কার করেন। একই বছর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা: মো: তৌফিকুল ইসলামের সহযোগিতায় ION LIVE SCIENCE LIMITED (ILSL) কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি এই পানির গুণমান মূল্যায়ন এবং এর উত্তরোত্তর উন্নতি সাধনে ড. দিলরুবা আফরোজা ইসলাম, ডা: মো: আতিকুল ইসলাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এস. এম. মন্জুরুল আলমকে নিয়ে ৫ সদশ্য বিশিষ্ট একটি রিসার্চ টিম গঠন করেন। ২০১৮ সালে তার দুই কন্যা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বায়োকেমিস্ট্রি এ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজী বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. তোফাজ্জল হোসাইন অন্তর্ভূক্ত হন। ড. খানের ফর্মূলা দ্বারা উদ্ভাবিত পানির উপর গবেষণা করে ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২২ সালে ৩ জন ছাত্র ড. হোসাইনের তত্বাবধানে তাদের এম.এস-সি থিসিস ডিগ্রি সম্পন্ন করেছে, বর্তমানে আরো ২ জন ছাত্র গবেষণা করছে যা খাবার পানির সেক্টরে বিরল দৃষ্টান্ত। এই গবেষণা ভবিষ্যতে খাবার পানির গুণমান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ILSL এর রিসার্চ টিম ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কয়েকটি যায়গায় সুপেয় তুলনামূলক ভাল পানির সন্ধান পেয়েছে। ড. খানের ফর্মূলা ব্যবহার করে এই পানিকে অল্প খরচ ও সামান্য প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে উন্নত মানের পানি (অ্যালকালাইন আয়নাইজ্ড ওয়াটার, মিনারেল ওয়াটার, ক্যানসার প্রতিরোধে নেগেটিভ ORP ওয়াটার, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে হাইড্রোজেন ওয়াটার, কিডনি রুগিদের জন্য লো মিনারেল ওয়াটার, মানষিকভাবে অসুস্থদের জন্য লিথিয়াম ওয়াটার , ৪ থেকে ১৩ বছর বয়সীদের জন্য কিড্স ওয়াটার, গর্ভকালীন মহিলাদের জন্য মম ওয়াটার, শুন্য থেকে ১ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য বেবি ওয়াটার, রান্নার জন্য কুকিং ওয়াটার এবং বেকারি আইটেম তৈরির জন্য বেকিং ওয়াটার) তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করে গার্মেন্টস ও ঔষধ শিল্পের মত পানির ক্ষেত্রেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।